মঠবাড়িয়ায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তের পথে কামার শিল্প
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় আধুনিকতার ছোয়ায় বিলুপ্তের পথে কামার শিল্প। এক সময় উপজেলার বিলিন্ন হাট-বাজারের কামাড় পাড়ায় পাড়ার কাছাকাছি পৌঁছাতেই কানে আসে লোহা পেটানোর টাং টুং শব্দ ভেসে আসতো। অনলাইন সহ বিভিন্ন আনুনিকতার কারনে এখন আর সেই রকম টাং টুং শব্দ তেমন একটা শোনা যায় না।
বংশ পরম্পরায় চলে আসা এক সময়ের ঐতিহ্য এখন হারিয়ে যাচ্ছে। হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার এ পেশাকে ধরে রেখে জীবিকা নির্বাহ করছেন। মঠবাড়িয়া পৌর শহরের ঐতিহ্যবাহী কামার পাড়ায় বর্তমানে মাত্র ৮ জন এ পেশায় জড়িত রয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কর্মকার ও তাদের কারিগর তাঁরা লোহা পিটানো, গলানো, ধারালো করা, আল কাটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজ করছেন। কয়লা প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে একটি মাল তৈরি করে ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত সবাই আলাদা আলাদা ভাবে কাজ করেন।
তারা ধীরে ধীরে কাঁচা লোহা গরম করেন।, সেটা থেকে মালামাল বানানোর কাঠামো তৈরি, তারপর গৃহস্থালি বঁটি, খুন্তি, পাছুন, কৃষকের কাস্তে, নিড়ানি, খুন্তি, কোদাল, লাঙলের ফলা, শ্রমিকের কুঠার, শাবল, দা, বটি, বড় চাকু ইত্যাদি তৈরি করা, ফিনিশিং দেওয়া, ধারালো করা, ও সবার শেষে বিক্রি জন্য উপযুক্ত একটি মাল তৈরি করেন। তারা গ্রামীণ ও নগর জীবনে ধরে রেখেছে অর্থনীতির অন্যতম বলয়।
সুশীল কর্মকার জানান, প্রতি বছর ধান কাটার মৌসুম ও কুরবানীর ঈদকে কেন্দ্র করে দোকানে মোট ৫-৬ জন কারিগর কাজ করেন। তাঁদের বেতন মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
তাঁদের মধ্যে নিয়মিত কর্মচারী তিন থেকে চারজন। কর্মচারীদের সঙ্গে তিনি নিজেও কাজ করেন। তবে তিনি তার পরের প্রজন্মকে এই পেশা থেকে দূরে রাখছেন। এখন আমার সংসার চলছে দিন আনি দিন খাই অবস্থায়।
এক সময় লাখ টাকার কাজও করেছি। আবার ৪০ হাজার টাকার কাজ করলে শ্রমিকদের বেতন, কয়লার খরচ দিয়ে ২০-২৫ হাজার টাকা থাকতো। কিন্তু এখন আর আগের অবস্থা নাই। কয়লার দাম অনেক বেশি। এখন মানুষ অনলাইনে সব কিছু অর্ডার দিয়ে কিনে ফেলে, আমাদের কাছে আগের মতন কেউ আসে না। আমরা আর বড় কাজ পাই না।
ছোটখাটো কাজ করি। আবার এখন অনেক আধুনিক মেশিন আসছে, সব যন্ত্রপাতি এখন মেশিন দিয়ে কাটে। আগে এগুলো আমরা হাতে তৈরি করতাম। কামারের কাজ এখন নাই বললেই চলে। বছরের বেশিরভাগ সময় আমরা বসে থাকি। টুকটাক করে জীবন চলে।
রবিন কর্মকার আক্ষেপ করে বলেন, বছরের পর বছর এ শিল্প নিয়ে কাজ করলেও তাঁরা কোনো ব্যাংক ঋণ সুবিধা পান না। সব সময় তাঁদের ঋণ লাগে না। কিন্তু যখন ঋণ প্রয়োজন হয়, তখন চড়া সুদে এনজিও থেকে ঋণ নিতে হয়।
আর সে ঋণ পরিশোধ করতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। পরের প্রজন্ম এ পেশায় আসবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, তিন পুরুষ ধরে আমরা এই কাজ করতেছি। আমার ছেলে মাস্টার্স পাশ করেছেন। আমার পরিবারের কোন সদস্যকে এই পেশায় নিয়ে আসার ইচ্ছা নাই। আমাদের দোকানের বয়স ৭০ বছর কিন্তু আজ পর্যন্ত আমাদের পুঁজি বলতে কিছুই নেই।
দিন এনে দিন খেয়েই কেটে যাচ্ছে আমাদের জীবন। আমি চাই না ও কোনো ভাবে এই পেশায় আমার সন্তান আসুক। তবে তারা মনে করছেন কালের পরিবর্তনে একটি সময় হয়তো বিলুপ্ত হয়ে যাবে এই ঐতিহ্যবাহী পেশা। কারন আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন এই শিল্প প্রয়োজন কমে যাচ্ছে মানুষের কাছে।
মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ূম বলেন, কামর শিল্প দেশের অর্থনৈতকি একটা অংশ। তাদের সুবিধার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন
Array